করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে গোপন না করে জরুরি ভিত্তিতে টেস্ট করানোর আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সংসদ ভবন এলাকার সরকারি বাসভবনে আজ শনিবার সকালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকারের কোভিড-১৯-এর টেস্টিং ক্যাপাসিটি অনেক বেড়েছে। অনেকের করোনাভাইরাসের উপসর্গ, লক্ষণ দেখা দিলেও টেস্ট না করিয়ে গোপন রাখছে। এতে তারা বিপদ ডেকে আনছে। উপসর্গ বা লক্ষণ প্রকাশ পেলে সঙ্গে সঙ্গে হটলাইনে বা হাসপাতালে যোগাযোগ করার বিষয়টি সবাইকে লক্ষ রাখতে অনুরোধ করছি।’
সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন কার্যক্রম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। তাঁর ওপর আস্থা রাখুন, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন।’
এ সময় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে পরিবহন শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসকদের গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসন বা উপজেলার মাধ্যমে তালিকা অনুযায়ী যে ত্রাণ কার্যক্রম চলছে, এতে পরিবহন শ্রমিকসহ অন্য শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। জেলা-উপজেলা প্রশাসন আশা করি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন।’
প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্য গার্মেন্টস মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তৈরি পোশাক কারখানাগুলো চালু করার আগে মালিকরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এই সংকটে কোনো প্রকার শ্রমিক ছাঁটাই অথবা লে-অফ করা হবে না। ঢাকায় অবস্থানরত শ্রমিকদের দিয়েই কারখানা পরিচালনা করা হবে। বিভিন্ন জেলা এবং গ্রামে অবস্থান করা শ্রমিকদের বেতনের একটি অংশ দেওয়া হবে। তাদের ঢাকায় আসতে নিরুৎসাহিত করা হবে। প্রকৃতপক্ষে আমরা দেখছি, প্রতিদিন দলে দলে বিভিন্ন উপায়ে শ্রমিকরা ঢাকায় ফিরছেন। তাঁরা বলছেন, অফিস থেকে ডাকা হয়েছে। আবার গতকাল শুনলাম গাজীপুরের একটি কারখানায় লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে, ছাঁটাই করা হয়েছে শ্রমিকদের। এটা তো হওয়ার কথা ছিল না।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকার এই খাতে সুরক্ষা দিতে এরই মধ্যে নিম্ন সুদে প্রণোদনা, রপ্তানি খাতে সহযোগিতাসহ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানদের টেলিফোনে অনুরোধ জানিয়েছেন। আমরা আশা করি, বিশ্বাস করি, এই সংকটে পোশাকশিল্পের মালিকরা দয়ার মানসিকতার মাধ্যমে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবেন। আপনারা জানেন, শেখ হাসিনার সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে। আপনারা শ্রমিক-কর্মী ভাইবোনদের পাশে থাকুন, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুন। শ্রমিক ছাঁটাই বা ফ্যাক্টরি লে-অফ ঘোষণা যারা করছে, তারা বিরত থাকুন।’
ফ্রন্টলাইনে থেকে যেসব পুলিশ, চিকিৎসক, সাংবাদিক, স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান ওবায়দুল কাদের।
এ ছাড়া করোনাযুদ্ধে অংশ নেওয়া চিকিৎসক, সেবিকা, টেকনোলজিস্টসহ যাঁরা সাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন এবং চিকিৎসাকাজ অব্যাহত রেখেছেন, তাঁদের সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে হারিয়েছি একজন চিকিৎসক, একজন স্বাস্থ্যকর্মী, একজন সাংবাদিক, একজন ব্যাংকার ও চারজন পুলিশ সদস্যকে। পাশাপাশি মাঠ প্রশাসনে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য সাংবাদিক, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ সামনের সারিতে থেকে যাঁরা করোনাবিরোধী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।’
সেতুমন্ত্রী আরো বলেন, ‘দেশ ও জাতির এই সংকটকালে যাঁরা নিবেদিতপ্রাণ, নিশ্চয়ই জাতি তাঁদের যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করবে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করেছেন। আমি মনে করি, সুযোগ-সুবিধা বড় কথা নয়, তাদের মনোবল এবং সেবার মানবিকতা আমাদের জন্য অসীম আঁধারের সাহসী ভূমিকা।’